গম উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহের বর্ণনা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা কি "গম উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহের বর্ণনাএবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য" সম্পর্কে জানার জন্য সঠিক গাইডলাইন পাচ্ছ না? তাহলে এ প্রতিবেদনটি তোমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন কারণ এই প্রতিবেদনে রয়েছে গন গম উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহের বর্ণনা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
ভূমিকা
গম এমন একটি ফসল যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কম বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৫৫ ডিগ্রি এর মধ্যবর্তী এলাকা হল প্রধান গম উৎপাদক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ ও উত্তর গোলার্ধে এলাকার দেশগুলোতে বিশ্বের প্রায় ৯০% গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। আর বাকি ১০% গম দক্ষিণ গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে থাকে।
গম উৎপাদনকারী অঞ্চলসমূহ
গম উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-
(ক) গম উৎপাদন অনুযায়ী অঞ্চলসমূহ
(খ) জন ঘনত্ব অনুসারে গম উৎপাদক অঞ্চল
(ক) গম উৎপাদন অনুযায়ী অঞ্চলসমূহ
গম উৎপাদনকারী অঞ্চলসমূহ কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। দেশের চাহিদা পূরণের জন্য
ইউরোপের প্রায় সব দেশেই নিজের চাহিদা পূরণের জন্য গম উৎপন্ন করে। এই অঞ্চলগুলো হচ্ছে-
দানিয়ূব অববাহিকা- দানিয়ূব অববাহিকা দেশগুলোর মধ্যে পড়ে হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ইত্যাদি।
দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়া- ডন-নদীর পশ্চিম দিকের ভূ-ভাগে শীতকালীন এবং পূর্ব দিকের ভূ-ভাগে বসন্তকালীন গম উৎপন্ন হয়।
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ- গম উৎপাদনের দিক থেকে এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ডেনমার্ক ও পোল্যান্ড এ অঞ্চলের অন্তর্গত।
ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল- অধিকাংশ অঞ্চল বন্ধুর প্রকৃতির তাই গম ভালো হয় না। ইটালির পো নদীর অববাহিকার গমের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।
২। রপ্তানি করার জন্য
উত্তর আমেরিকার প্রেইরী অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস ও ইউরোপের স্তেপ অঞ্চলে গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
(খ) জন ঘনত্ব অনুসারে গম উৎপাদক অঞ্চল
জনঘনত্ব অনুসারে পৃথিবীর গম উৎপাদক অঞ্চলগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। ঘন বসতিযুক্ত অঞ্চল
ঘন বসতিযুক্ত অঞ্চলের গম উৎপাদক এলাকার সমূহ হচ্ছে- ব্রিটিশ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, ইউক্রেন ইত্যাদি।
২। মধ্যম ও বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল
মধ্যম ও বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চলের গম উৎপাদক এলাকার সমূ,গুলো হল- রাশিয়া, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউক্রেন, সুইডেন ইত্যাদি। মধ্যম ও বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করার কারণ হলো- ওই এলাকাগুলোতে জনবসতি খুবই কম।
নিম্নে মহাদেশ ভিত্তিক কম উৎপাদনের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হলো-
এশিয়া মহাদেশ গম উৎপাদন অঞ্চল
এশিয়ার সমতল উর্বর ভূমি, আর্দ্র ও বৃষ্টিবহুল জলবায়ু, প্রাপ্ত সূর্যকিরণ, প্রচন্ড উষ্ণতা, সস্তা শ্রম, প্রচুর চাহিদা ইত্যাদি নিয়ামকের জন্য অঞ্চলগুলোতে গম চাষ করা হয়ে থাকে। এশিয়ার গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চীনের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। তারপর ভারত, পাকিস্তান, কাজাকিস্তান ইত্যাদি। নিম্নে এগুলো সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল-
১। চীন দেশ
গম উৎপাদনের দিক থেকে চীন বর্তমান বিশ্বে প্রথম স্থানের অধিকারী। চীন দেশ বিশ্বের মোট গম উৎপাদনের প্রায় ১৭%। শীতকালীন ও বসন্তকালীন উভয় প্রকার গম-ই চীনে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে মোট উৎপাদিত গমের প্রায় ৯০% শীতকালীন। সাধারণত দেখা যায় যে, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং অববাহিকা, সেচুয়ান অববাহিকা, লোয়েস মালভূমি, চাহার শুইয়ুয়ান এলাকা প্রভৃতি অঞ্চলে গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
২। ভারত
গম উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় রয়েছে। ভারতের গম শীতকালের একটি ফসল। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম দিকে বপন করে বসন্তের প্রথমে কাটা হয়ে থাকে। উচ্চ গঙ্গা উপত্যকা, সিন্দু উপত্যকা প্রধান গম উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ভারতে গম উৎপাদনকারী প্রদেশগুলো হচ্ছে-পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে সর্বাধিক গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
৩। পাকিস্তান
সাধারণত দেখা যায় যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ গম শীতকালে উৎপন্ন হয়। ঝিলম থেকে শ্রতদ্রু নদী পর্যন্ত এলাকা গম চাষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে গম চাষের দিক থেকে পাকিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে আমদানি করতে হয় না।
৪। তুরস্ক
তুরস্কের হেক্টর প্রতি গম উৎপাদন পাকিস্তান অপেক্ষা কম হয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত তুরস্কের ইজমির ও আনাতলী মালভূমি এবং ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে গম চাষ হয়ে থাকে।
৫। অন্যান্য দেশ
এশিয়ার অন্যান্য গম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে ইরান, কাজাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ প্রধান। এর সমস্ত দেশগুলো তাদের নিজের চাহিদা পূরণ করার পরও আমদানি করে থাকে।
অতএব দেখা যায় যে, এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেই ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে।
ইউরোপ মহাদেশ গম উৎপাদনকারী অঞ্চল
বিশ্বে ইউরোপ গম উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ইউরোপের চারটি অঞ্চলকে গম উৎপাদনের দিক থেকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এগুলো হলো-
- উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ
- ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল
- দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং
- রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল
সাধারণত উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের উত্তর দিকে ১৬ ডিগ্রি সমাক্ষরেখা পর্যন্ত গম চাষ করা হয়ে থাকে। ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গম চাষের পক্ষে অনুকূল। নিম্নে ইউরোপ মহাদেশের গম উৎপাদনকারী দেশসমূহ আলোচনা করা হলো-
১। রাশিয়া
গম উৎপাদনে রাশিয়া ইউরোপের প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ভলগা অববাহিকা, ইউরাল, পশ্চিম সাইবেরিয়া এবং আমুর নদীর অববাহিকায় গম চাষ করা হয়ে থাকে। রাশিয়ায় উৎপাদিত অধিকাংশ গম নরম জাতের। ফলে এই গম থেকে উন্নত মানের রুটি তৈরি করা যায় না। বর্তমানে রাশিয়া অভ্যন্তরিন চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব বাজারে গম রপ্তানি করে থাকে।
২। ফ্রান্স
ফ্রান্সের হেক্টর প্রতি উৎপাদন তুলনামূলক বেশি, প্রায় ৭২২৪ কেজি। ফ্রান্সের উত্তরাংশে অবস্থিত প্যারী উপত্যকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গমের চাষ হয়। এছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়। ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশ।
৩। জার্মানি
জার্মানিতে গম চাষে নিয়োজিত ভূমির পরিমাণ কম। কিন্তু হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি হওয়ায় জার্মানি ইউরোপের প্রতিনিধিত্বকারী দেশে পরিণত হয়েছে। জার্মানির রাইন অববাহিকা এবং উত্তরের সমভূমি অঞ্চলে গম চাষ করা হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ও জার্মানি প্রচুর গম বিদেশে রপ্তানি করে থাকে।
৪। যুক্তরাজ্য
সাধারণত গম চাষে নিয়োজিত ভূমির পরিমাণ যুক্তরাজ্যের কম। তবে হেক্টর প্রতি উৎপাদনে যুক্তরাজ্যে বিশ্বে প্রথম স্থানের অধিকারী। এদেশের হেক্টর প্রতি গম উৎপাদন ৭৭৯১ কেজি।
৫। অন্যান্য দেশ
ইউরোপের গম উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের মধ্যে ইতালি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি প্রভৃতি প্রধান। এ সমস্ত দেশ তাদের নিজেদের চাহিদা না পূরণ হলেও গম উৎপন্ন করে থাকে।
অতএব অপরুপ্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ইউরোপ মহাদেশ গম উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এই মহাদেশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানগুলো গম চাষের সূত্র বলে ধরে নেওয়া যায়।
উত্তর আমেরিকা মহাদেশ গম উৎপাদনকারী অঞ্চল
এ মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রস্থ আটলান্টিক মহাসাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গম চাষ করা আরম্ভ হয়। বর্তমানে আমেরিকার প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে গম চাষ দেখা যায়। আমেরিকা মহাদেশের উত্তর দিকে গম চাষের সীমানা ৯০ দিন তুষার মুক্ত রেখা এবং দক্ষিণ দিকে সীমানা ২১ ডিগ্রী সে. সমাক্ষরেখা দ্বারা নির্ধারিত। এ সমস্ত বলয়ের মধ্যে উত্তরে সর্বনিম্ন ২৩ সেন্টিমিটার এবং দক্ষিণের সর্বনিম্ন ৩৮ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বিশিষ্ট অঞ্চলে গম উৎপন্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এ অঞ্চলের গম উৎপাদনকারী দেশ। নিম্নে এসব দেশের গমের উৎপাদন ও বন্টন দেখানো হলো।
১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সময়ে বিশ্বে গম উৎপাদনে চতুর্থ স্থানের অধিকারী। গম যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে পরিচিত। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গম রপ্তানি করে থাকে। এখানে গম উৎপাদনের জন্য তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকা ইত্যাদি উপযোগী। যুক্তরাষ্ট্রের গম উৎপাদনকারী অঞ্চলে চারটি বলায় রয়েছে। এগুলো হল-
(ক) বসন্তকালীন গমবলয়
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর দিকের রাষ্ট্র সমূহ ডাকোটা, মিনেসটা থেকে শুরু করে কানাডার আলবার্টা পর্যন্ত বসন্তকালীন গমবলয় বিস্তৃত। পৃথিবীর মধ্যে এটি একক বৃহত্তম বাণিজ্যিক গম উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি বলা হয়ে থাকে এই অঞ্চলকে। শীতের আধিক্য, পর্যাপ্ত মূলধন, রেলপথের সুন্দর ব্যবস্থা, উন্নত বাজার, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা ইত্যাদি কারণে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়ে থাকে এ অঞ্চলে। অতএব সবকিছু সুবিধা এখানে বিদ্যমান এবং গমের উৎপাদন এত বেশি যে তাকে রুটির ঝুড়ির সাথে তুলনা করা হয়েছে।
(খ) শীতকালীন শক্ত গমবলয়
বসন্তকালীন গম বলায়ের দক্ষিণ দিকে একটি সংকীর্ণ বলয় রয়েছে। এ বলয় প্রচন্ড উত্তাপ ও প্রবল শীতের জন্য কোন প্রকার গম-ই জন্মে না। এর দক্ষিণের প্রেইরি তৃণভূমি প্রেরিত তৃণভূমির দক্ষিণাংশে শীতকালীন গম বলয় অবস্থিত। এখানে অনুকূল জলবায়ু, সমতল ভূমি, উর্বর মৃত্তিকা, মূলধন, উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণে গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
(গ) শীতকালীন নরম গম বলয়
আর্দ্রতার কারণে এ অঞ্চলে নরম গমের চাষ করা হয় বলে একে শীতকালীন নরম গম বলয় বলে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইলিয়নয়, রকনটাকি, পেনসিলভানিয়া, নিউইয়র্ক, ইন্ডিয়ানা, ওহিও, মেরিল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্যে শীতকালে লাল নরম গম চাষ করা হয়ে থাকে। সাধারণত বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে এই অঞ্চলে। এখানকার মাটি উর্বর নয় বলে নিম্নমানের কম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
(ঘ) সাদা নরম গম বলয়
সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বিশিষ্ট ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং পূর্বাংশের হ্রদ অঞ্চলের মিশিগান রাজ্যে শুষ্ক কৃষির আওতায় সাদা নরম গম চাষ করা হয়ে থাকে। এ বলায়ের সুবিধা হচ্ছে উর্বর জৈবসার সমৃদ্ধ মৃত্তিকা, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি, রেল যোগাযোগ ও সহজে বন্দর ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এখানে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
২। কানাডা
কানাডার ডেইরি অঞ্চলে আলবর্টা, মেনিটোবা, সাসকাচুয়ান, ফন্টারিও এবং উইনিপেগ রাজ্যে গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। উন্নত রেল যোগাযোগ, পর্যাপ্ত মূলধন ইত্যাদি কারণে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। উন্নত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এদেশে লাল কঠিন গমে চাষ করা হয়।
৩। অন্যান্য দেশ
উত্তর আমেরিকার গম উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশে মধ্যে মেক্সিকো গুয়েতেনামা, হন্ডুরাস প্রধান। এ সমস্ত দেশ তাদের নিজেদের জন্য কম উৎপন্ন করে থাকে।
অতএব দেখা যায় যে, উত্তর আমেরিকা গম উৎপাদনে অন্যান্য মহাদেশ থেকে বেশ উত্তম। গম উৎপাদনে মহাদেশ ভিত্তিক এর অবস্থান তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ ও উৎপাদনকারী অঞ্চল
গম উৎপাদনের দক্ষিণ আমেরিকার তেমন উন্নত নয়। আর্জেন্টিনা এ মহাদেশের প্রধান গম উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়া অন্যান্য দেশে ও কিছু পরিমাণ গম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
১। আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার পাম্পাস তৃণভূমি প্রধান গম উৎপাদনকারী এলাকা। বার্ষিক গড় ৪০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বিশিষ্ট অঞ্চলে গম চাষ করা হয়ে থাকে। এদেশের শীত ও বসন্তকালীন গমের চাষ করা হলেও শীতকালীন গমের পরিমাণ বেশি। এ মহাদেশের ৮০ ভাগ গম এখানে চাষ হয়ে থাকে।
২। অন্যান্য দেশ
দক্ষিণ আমেরিকার গম উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, চিলি, কম্বোডিয়া, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ইত্যাদি দেশে সামান্য পরিমাণে গম চাষ করা হয়ে থাকে।
ওসেনিয়া মহাদেশ
ওসেনিয়া ২০১৪ সালে মোট ২. ৫৭ কোটি মেট্রিকটন গম উৎপন্ন করে থাকে যা বিশ্বে মোট গম উৎপাদনের প্রায় ৩.৫৩ শতাংশ। এখানে মোট ফসলি জমির দুই তৃতীয়াংশ গম চাষ করা হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান গম উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ। অস্ট্রেলিয়ায় শীতকালে গমের চাষ করা হয়ে থাকে। মারে ডার্লিং নদীর অববাহিকার ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের ডাউন্স তৃণভূমি অস্ট্রেলিয়ার প্রধান গম উৎপাদনকারী অঞ্চল। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম বলে অস্ট্রেলিয়া প্রচুর গম রপ্তানি করে থাকে।
আফ্রিকা মহাদেশ
গম উৎপাদনে আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্বের চতুর্থ। এ মহাদেশের মরক্কো, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়ার উপকূলবর্তী সমভূমি অঞ্চলে ভালো গম হয়ে থাকে। এখানে যে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় তা গম চাষের জন্য উপযোগী।
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কম বেশি গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। কোন দেশে বেশি আবার কোন দেশে কম। বিশ্বের অনেক দেশ আছে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গম চাষ করে থাকে। আবার কিছু দেশ আছে তাদের নিজের চাহিদা পূরণের জন্য গম উৎপন্ন করে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে গম ই ই একমাত্র খাদ্যশস্য যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে কম বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
গমের বিশ্ব বাণিজ্য
গমের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য গম। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে এই গম দিয়ে। গম উৎপাদনকারী দেশগুলো অনেক সময় গম কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজে লাগিয়ে থাকে। গমের বিশ্ব বাণিজ্য দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
(I) রপ্তারি কারক
বিশ্বে গম রপ্তানিকারক দেশসমূহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে প্রথম। কানাডা গম রপ্তানিতে দ্বিতীয়। অধিকাংশ দেশের উৎপাদিত গম নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণেই শেষ হয়ে যায়। যেসব দেশ গম রপ্তানি করে তাদের কোনটি আবার গম আমদানিও করে থাকে। ফ্রান্স তার উৎপন্ন গমের অর্ধেক, অস্ট্রেলিয়ার এক তৃতীয়াংশ, রাশিয়া ১ চতুর্থাংশ গম রপ্তানি করে।
(II) আমদানি কারক দেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ গম আমদানি করে থাকে। মিশর প্রথম, ব্রাজিল দ্বিতীয়, ইন্দোনেশিয়া চতুর্থ গম আমদানি করে থাকে। এছাড়া চীন অনেক সময় বেশি দামে চাউল বিক্রয় করে কম দামে গম ক্রয় করে থাকে। আফ্রিকার আলজেরিয়া, ইউরোপের ইতালি এবং রাশিয়ার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া গম আমদানি করে থাকে।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কম বেশি গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। কোন দেশে বেশি আবার কোন দেশে কম। বিশ্বের অনেক দেশ আছে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গম চাষ করে থাকে। আবার কিছু দেশ আছে তাদের নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য গম উৎপন্ন করে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে গম-ই একমাত্র খাদ্যশস্য যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে কম বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
মন্তব্য
আজকে এই প্রতিবেদনে "গম উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহের বর্ণনাএবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য" প্রদান করা হয়েছে। আমি আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। আর যদি নতুন কোন বিষয়ে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ধারণা পেতে চাও তাহলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবে। তাহলে নতুন বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url