গমের উৎপত্তি, ব্যবহার, শ্রেণীবিভাগ, গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়ামক

প্রিয় পাঠক, গমের উৎপত্তি, ব্যবহার, শ্রেণীবিভাগ, গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়ামক সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে খুব আগ্রহী সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে এই নিয়ে চিন্তিত? তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ গমের উৎপত্তি, ব্যবহার, শ্রেণীবিভাগ, গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়ামক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

গমের উৎপত্তি, ব্যবহার, শ্রেণীবিভাগ, গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়ামক

ভূমিকা

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষিজ পণ্যের মধ্যে গম অন্যতম। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার নির্বাচিত কত গুলো দেশ গম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সাধারণত ১৩.৮৯ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এবং ৩৮.১৫ সেন্টিমিটার থেকে ৭৬.৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বিশিষ্ট এলাকায় গমে চাষ করা হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ গম উৎপাদক এলাকা উত্তর গোলার্ধে ১৫ ডিগ্রি থেকে ৬৬ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ১৫ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। গম গাছ সাধারণত ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। গাছের প্রতিটি শীষ ২০ - ৩০ কখনো কখনো ১০০ টি পর্যন্ত শস্যকণা থাকে।

গম দানা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। শর্করা ও প্রোটিন মানবদেহের শক্তি ও তাপ উৎপাদনে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। গম গুড়া করে আটা নানা রকম রুটি, বিস্কুট, পিঠা, নাস্তা, নুডুলস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। গমের খড় পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আটাতে রয়েছে ১২.১ গ্রাম, শরকরা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪-৫৮ গ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ সাইক্রেগ্রাম, ভিটামিন১- ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি টু ০.২৯ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম, জলীয়বাষ্প ১২.২ গ্রাম।

গমের উৎপত্তি (Origin of Wheat)

খাদ্যশস্য হিসেবে গম এর ব্যবহার সুপ্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসলেও, কবে এবং কোথায় সর্বপ্রথম গম চাষ শুরু হয়েছিল তার কোন সঠিক হিসাব নেই। এশিয়া মাইনর (তুরস্ক) ও মধ্যপ্রাচ্যে সর্বপ্রথম গম চাষ শুরু হয় এবং সেখান থেকে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশসমূহ ও ইউরোপে বিস্তার ঘটে।

এর কিছুদিন পরে ইউরোপ থেকে আমেরিকা ও অন্যান্য এলাকায় গমের বিস্তার হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। বিশেষজ্ঞগণের মত অনুসারে গমের প্রধান প্রধান প্রজাতি গুলোর আদিভূমি মধ্যপ্রাচ্যে, পাকিস্তান, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর আমেরিকা ও আবিসিনিয়া। তবে বর্তমানে রুটি তৈরির জন্য যে গম ব্যবহৃত হয়, সম্ভবত পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল এর উৎপত্তিস্থল। এখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গম প্রভাব বিস্তার করতে থাকে বলে মনে করেন অনেকে।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে আমেরিকায় গমের বিস্তার ঘটে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে গম চাষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে গম চাষ ও ব্যবহার হয়ে থাকে।

গমের ব্যবহার (Uses of Wheat)

গ্রামের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরিসীম। গম মানুষের বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে অন্যতম। চাউল অপেক্ষা অধিক পুষ্টিকর খাবার এটি। এশিয়ার আর্দ্র মৌসুমী অঞ্চল ব্যতীত পৃথিবীর অবশিষ্টাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য গম । এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট উভয়ই আছে, যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজন। সাধারণত গমকে আটা, ময়দা, সুজি ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গম থেকে সাধারণত রুটি বাদেও নানা প্রকার খাদ্য সামগ্রী যেমন- কেক, বিস্কিট, পাউরুটি প্রভৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে, যা মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গমের শ্রেণীবিভাগ ( Classification of Whea )

পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে শীত ও বসন্ত উভয় ঋতুতে গম উৎপন্ন হয়ে থাকে। জলবায়ু ও মৃত্তিকা সমস্ত পৃথিবীব্যাপী এর আকৃতি ও রং এর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে, এই পার্থক্যের ভিত্তিতে প্রথমত গম কে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) উৎপাদন সময় অনুসারে গমের শ্রেণীবিভাগ ( Classification of Wheat According to Production Period )
(খ) আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গমের শ্রেণী বিভাগ (Classification of Wheat According to Size)

(ক) উৎপাদন সময় অনুসারে গমের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Wheat According to Production Period )

গমের উৎপাদন সময় অনুযায়ী সাধারণত দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-

১। বসন্তকালীন গম (Spring Wheat)

সাধারণত বসন্তের শুরুতে বীজ বপন করে গ্রীষ্মের শুরুতে ফসল তোলা হয়ে থাকে। যেসব অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায় এবং তুষারপাত হয়, সেসব অঞ্চলে বসন্তকালীন গমের চাষ হয়ে থাকে। যেমন- কানাডা, রাশিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে বসন্তকালীন গম চাষ হয়।

২। শীতকালীন গম (Winter Wheat)

সাধারণত শীতকালীন গমের বীজ শীতের শুরুতে বপন করা হয়ে থাকে। উত্তর গোলার্ধের সাধারণত নভেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এপ্রিল বা মে মাসে শীতকালীন গমের বীজ রোপনের কাজ শেষ করা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের উষ্ণতায় গম পরিপক্ক হওয়ার পর, সুবিধামতো শরতের আগে ফসল কাটা হয়ে থাকে। বিশ্বের মোট গম উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ শীতকালে উৎপন্ন হয়ে থাকে। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি উষ্ণ অঞ্চলে শীতকালীন গম চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে।

(খ) আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গমের শ্রেণী বিভাগ (Classification of Wheat According to Size)

কৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গম কে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-

১। সাদা গম (White Wheat)

সাদা গম নরম প্রকৃতির এবং শীত ও বসন্ত দুই ঋতুতেই এই জাতের গম চাষ করা হয়ে থাকে। সাধারণত এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে, চিলিতে চাষ করা হয়ে থাকে। এ গমের দানাগুলো বড় আকৃতির হয়ে থাকে।

২। ডুরাম গম (Durum Wheat)

সাধারণত ডুরাম গম কঠিন জাতের বসন্তকালীন একটি গম। ভারতের বিশেষত দক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলে ডুরাম গমের চাষ হয়ে থাকে। তাছাড়া উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় এবং ইউরোপের বিভিন্ন অংশে এ জাতীয় গমের চাষ দেখা যায়। ডুরাম গমের দানাগুলো মাঝারি থেকে বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এ জাতীয় গম বাংলাদেশে দেখা যায় না।

৩। শক্ত লাল গম (Hard Red Wheat)

শীত ও বসন্ত দুই ঋতুতেই শক্ত লাল গম চাষ করা হয়ে থাকে। লাল রংয়ের গম সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মধ্যইউরোপ, আর্জেন্টিনার বিভিন্ন অংশে লাল গমের চাষ করা হয়ে থাকে। এ গমের দানাগুলো ছোট থেকে মাঝারি আকৃতি হয়ে থাকে।

গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়ামক (Favourable Condition of Wheat Cultivation )

বিভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থার মধ্যে কম উৎপন্ন হয়ে থাকে। উষ্ণ আরব ভূমি এবং শীতল সাইবেরিয় প্রান্তর উভয় অঞ্চলেই গম উৎপন্ন হয়। নিম্নে কম উৎপাদনের বিভিন্ন নিয়ামত নিয়ামক যেমন প্রাকৃতিক, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদান সমূহ আলোচনা করা হলো।

১। প্রাকৃতিক উপাদান বা নিয়মক (Physical Factor)

গম উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। একটি অঞ্চলে গম উৎপাদন হবে কিনা তা সে অঞ্চলের প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করে থাকে। নিম্নে গম উৎপাদনের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-

(ক) জলবায়ু (Climate)

সাধারণত গম নাতিশীতোষ্ণ ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের একটি ফসল। উষ্ণ অঞ্চলে গম শীতকালীন ফসল হিসেবে এবং শীতল অঞ্চলে বসন্তকালীন ফসল হিসেবে গম চাষ করা হয়ে থাকে। গম চাষের জন্য জলবায়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জলবায়ুর মধ্যে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত উল্লেখযোগ্য উপাদান।

(I) উষ্ণতা (Temperature)

সাধারণত ১০ ডিগ্রি থেকে ২২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা গম চাষের উপযোগী। চারা বৃদ্ধির সময় ১০ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি সে. এবং পাকার সময় ২০ ডিগ্রি থেকে ২২ ডিগ্রি সে. উত্তাপ গম চাষের জন্য অনুকুল উষ্ণতা।

(II) বৃষ্টিপাত (Rainfall)

গম চাষের জন্য বেশি পানির দরকার নেই। যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ২০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটারের মধ্যে সেসব অঞ্চলে গম চাষ উপযোগী। গম চাষের প্রথম অবস্থায় বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হলেও গম কাটার সময় তা প্রয়োজন হয় না।

(খ) মৃত্তিকা (Soil)

সাধারণত গম চাষের পক্ষে প্রচুর জৈব সারপুর্ন কর্দম দোআঁশ মৃত্তিকা বেশি উপযোগী। তৃণভূমি অঞ্চলের কৃষ্ণ বর্ণের শেরনোজেম মৃত্তিকা, লাভা গঠিত কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোয়েস মৃত্তিকাতে গম ভালো উৎপন্ন হয়ে থাকে।

(গ) ভূপ্রকৃতি (Physiography)

গম চাষ ভূ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। ব্যাপকভাবে গম চাষের জন্য সমতল ভূমির প্রয়োজন। সমতল ভূমিতে পানি সেচ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে গম চাষ করা সহজ হয়ে থাকে। তবে সামান্য ঢালু থেকে তরঙ্গায়িত ভূমি ও গম চাষের জন্য উপযোগী হয়ে থাকে।

(ঘ) শেষ ব্যবস্থা (Irrigation System)

প্রথম দিকে গম চাষের জন্য একটু বেশি পানির দরকার হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত বিশিষ্ট অঞ্চলে সেচের প্রয়োজন হয় না। কোন বছর বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে শেষের প্রয়োজন দেখা দেয়।

২। আর্থ-সামাজিক উপাদান বা নিয়ামক (Socio-Economic Factors)

গম চাষের জন্য আর্থ-সামাজিক নিয়ামকের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক সময় প্রাকৃতিক অবস্থা অনুকূল হলেও অর্থনৈতিক কারণে কোথাও কোথাও গম চাষ উৎপাদন করা সম্ভবপর হয় না। নিম্নে অর্থনৈতিক নিয়ামকের উপাদানসমূহ বর্ণনা করা হলো-

(ক) মূলধন (Capital)

গম চাষের জন্য মূলধন একান্ত দরকার। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গম উৎপাদনের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি সার বিজ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হয়। এজন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে যে সমস্ত দেশ সমৃদ্ধ সেসব দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গম উৎপাদনের পরিমাণ ও বেশি দেখা যায়।

(খ) শ্রমিক (Labore)

বর্তমান সময়ে আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য দক্ষ শিক্ষিত শ্রমিকের একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য শিক্ষিত, দক্ষ শ্রমিকের বিকল্প চিন্তা করা যায় না।

(গ) পরিবহন (Transport)

গম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য সহজ ও সস্তা পরিবহন দরকার। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গম চাষের জন্য বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত যাবতীয় কাজ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়ে থাকে।

(ঘ) বাজার (Market)

রপ্তানি জাত খাদ্যশস্যের মধ্যে গম সর্বপ্রধান একটি ফসল। মোট উৎপাদনের প্রায় .৩০% গম বিশ্ব বাণিজ্যের রপ্তানি করে থাকে। বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে গমের চাষ কম বেশি হয়ে থাকে।

(ঙ) যন্ত্রপাতি (Tools)

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গম চাষের জন্য আধুনিক ট্রাক্টর, কম্বাইনার, হারভেস্টার, সিডার প্রভৃতি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ খরচ কম ও উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।

(চ) কৃষি উপকরণ (Agriculture Aids)

উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক অধিক ফলনের পূর্ব শর্ত। উন্নতমানের বীজ, সুষম সার ও পরিমিত সেচ প্রয়োগ করে উন্নত দেশসমূহ অধিক গম উৎপাদন করে থাকে। সময়মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

(ছ) সংরক্ষণ সুবিধা (Preservation Facility)

গম সহজে নষ্ট হয় না বলে সহজ উপায়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো গমে প্রতিশোধক ব্যবহার করে গুদামজাত করা হয়ে থাকে। গুদামজাত ভালো হলে সঠিক মূল্য পাওয়া সম্ভব সম্ভব।

৩। রাজনৈতিক উপাদান বা নিয়ামত (Political Factors of Elements)

গম উৎপাদনে রাজনৈতিক উপাদান বা নিয়ামক সমূহ বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এখানে রাজনৈতিক নিয়মকের মধ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি জড়িত আছে। নিম্নয়েগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

(ক) সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা (Government Policies)

যে কোন দেশের ফসল উৎপাদনের সরকারী আইন কানুন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহজ শর্তে ঋণ ও কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে উন্নত দেশের সরকারগুলো গম উৎপাদনে সহযোগিতা করে থাকে।

(খ) আন্তর্জাতিক রাজনীতি (International Policies)

পৃথিবীর পরশক্তি গুলো গমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলো কৃষকদের কাছ থেকে গম কিনে অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলোতে ঋণের পরিবর্তে সাহায্য প্রদান করে থাকে। অতএব সরকারের নীতির ওপর উৎপাদনের মাত্রা কম বেশি হয়ে থাকে।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, গম উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক ও অর্থ সামাজিক নিয়মকের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেয়ামতের একান্ত প্রয়োজন। এই উপাদান গুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনের সহায়তা করে থাকে।

মন্তব্য

আজকের এই প্রতিবেদনে গমের উৎপত্তিস্থান, গমের ব্যবহার, গমের শ্রেণীবিভাগ এবং গম চাষের অনুকূল পরিবেশ বা নিয়মকসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি এই বিষয়ে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে ধারণা পেতে হলে বা মনে রাখতে হলে বারবার পড়ার বিকল্প নেই। এই বিষয়ে যদি কোন পরামর্শ থাকে তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url