বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ আলোচনা কর
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা কি "বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ আলোচনা" সংক্রান্ত সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে আগ্রহী, এই বিষয়ে সঠিক তথ্য কোথায় পাবে এই নিয়ে চিন্তিত? তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে "বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ" বিস্তারিতভাবে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এর প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকো বিষয়টি ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
ভূমিকা
বাংলাদেশ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। সুতরাং দেশটি ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত একথা বলা যায়। আবার দেশটির দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও উত্তর দিকে হিমালয় পর্বত শ্রেণী অবস্থিত।
বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত দেশের পাহাড়-পর্বত এবং দক্ষিণে অবস্থিত উপসাগর দেশটির জলবায়ুর উপর তীক্ষ্ণ প্রভাব বিস্তার করে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে দেশটিতে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। বিধায় বাংলাদেশ ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত।
বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান উপাদান সমূহ (Major Components of Climate of Bangladesh)
কোন ভৌগোলিক এককের আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান তথা বায়ুর চাপ, তাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি ২৫ থেকে ৩০ বছরের গড় অবস্থাকে ওই ভৌগোলিক এককের জলবায়ু বলে। মূলত আবহাওয়া ও জলবায়ু একই উপাদানে গঠিত। তবে কোন স্থানের আবহাওয়া ওই স্থানের জলবায়ুর ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। তাপমাত্রা (Temperature)
বাংলাদেশের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা শীতকালে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ দিনের বেলায় তাপমাত্রা মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পরে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এপ্রিল-মে মাসে পরিলক্ষিত হয়। তখন সাধারণত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়, এটা গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি সময়। রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া জেলার কিছু জায়গায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়। তবে এপ্রিল মাসের পরে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে বৃষ্টিপাতের কারণে।
২। বৃষ্টিপাত (Rainfall)
সাধারণত রাজশাহী অঞ্চল ব্যতীত সারাদেশে বর্ষাকালে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। রাজশাহী অঞ্চলে সমগ্র দেশ অপেক্ষা ২০% কম বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই অঞ্চলটি সরাসরি হিমালয় পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত অর্থাৎ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এখানে বৃষ্টিপাত কম হয়। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। দেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ২০০০ মিলিমিটার। যার ৮০% বৃষ্টিপাত বর্ষা মৌসুমী হয়ে থাকে।
জুনের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আবার নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত শুষ্ক শীতল শীতকাল। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০০০ মিলিমিটার, দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ২৫০০ মিলিমিটার এবং উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে আসাম পাহাড়ের নিকটবর্তী এলাকায় ৫০০০ মিলিমিটারের উপরে হয়ে থাকে। দেশের মোট বৃষ্টিপাতের ৪ ভাগের ৩ ভাগ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। তখন বাতাসের আর্দ্রতা ৯০% থেকে ৯৫% এর কাছাকাছি থাকে। শীতকালে সাধারণত আবহাওয়া শুষ্ক ও আকাশ পরিষ্কার থাকে। তখন গড় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে এবং বৃষ্টিপাত হয় না বললেও চলে।
৩। মেঘ (Clouds)
বাংলাদেশের আকাশে দুইটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য ঋতু তথা শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে আকাশে মেঘের সৃষ্টি হয়। শীতকালে শুষ্ক ও শীতল বায়ু ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় এবং খুব সামান্য আকাশের মেঘের সৃষ্টি করে। শীত মৌসুমের শেষের দিকে এবং গ্রীষ্ম মৌসুম শুরুর পূর্বে আকাশে মেঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন বর্ষা মৌসুম শুরু হয় তখন আকাশে দ্রুত মেঘের বিস্তৃতি ঘটে। জুলাই ও আগস্ট মাস হল বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময়। এই সময়ে দেশের প্রায় ৭৫ থেকে ৯০% আকাশ মেঘযুক্ত থাকে। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল আকাশে মেঘের বিস্তৃতি প্রায় ৯০% এবং উত্তর-পশ্চিমাংশে ৭৫%। গ্রীষ্ম মৌসুম শেষ হবার সাথে সাথে আকাশে মেঘের আনাগোনা দ্রুত হ্রাস পায়।
৪। কুয়াশা (Fog)
বাংলাদেশের শীতকালে রাতের বেলায় ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ করে শীতল হলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর শীতল হয়ে শিশিরাঙ্কে পৌঁছে। ফলে বায়ুর জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভূমি সংলগ্ন ধোঁয়ার আকারে ভাসতে থাকে, একে কুয়াশা বলে। কুয়াশা খুব হালকা এবং বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কুয়াশা সাধারণত পর্বতের উপত্যকা, নদী, বিল, বড় হ্রদ, নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশি ঘন ও মাত্রা বেশি হয়ে থাকে।
৫। শিশির (Dew)
শীতকালে বাংলাদেশের দিন অপেক্ষার রাত বড় হয়। এই সময় ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে। তখন শীতল বায়ুর সংস্পর্শে উপরের বায়ু ও শীতল হয় এবং তা বেশি জলীয়বাস্প ধারণ করতে পারে না। এর ফলে স্থিরবায়ুতে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা ঘনীভূত হয়ে ঘাস, লতাপাতা, শিলাখন্ড, ভূমি প্রভৃতির ওপর সঞ্চিত হয়। একে শিশির বলা হয়।
তবে ধীর বায়ু প্রবাহ ও নির্মল আকাশ শিশির পাতের জন্য সহায়ক। দেশের সব ঋতুতে শিশির পাত হলেও শীতকালে বেশি হয়। শীতকালে রাতে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায় বিধায় সন্ধ্যা থেকে শিশির ও কুয়াশা পড়তে থাকে।
৬। আর্দ্রতা (Humadity)
বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বাতাসের আর্দ্রতা বলে। কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু যে পরিমাণ আর্দ্রতা ধারণ করতে পারে তার তুলনায় কতটুকু আছে সেই পরিমাণকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। দেশে বাতাসের আর্দ্রতা সব ঋতুতে সমান থাকে না। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে মার্চ ও এপ্রিল মাসে বাতাসের আর্দ্রতা ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। দেশের পূর্বাঞ্চলে সর্বনিম্ন বাতাসের গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পরিলক্ষিত হয়। দেশের বার্ষিক গড় আর্দ্রতার পরিমাণ ৭৯ %। দেশের বাতাসে অধিক আর্দ্রতার কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
৭। বায়ু প্রবাহ ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (Atmospheric pressure and winds)
বাংলাদেশ শীত ও গ্রীষ্ম ঋতু পরিবর্তনের ফলে বায়ু মন্ডলীয় চাপ ও বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তন হয়। শীতকালে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে উচ্চচাপ বিরাজ করে। এই উচ্চচাপ থেকে শীতল বায়ু পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশে ওই সময়ে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
গ্রীষ্মকালে পশ্চিম-মধ্য ভারতের স্থলভাগে অতিরিক্ত উষ্ণতার কারণে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের দিকে বঙ্গোপসাগর হতে উষ্ণ ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবাহিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বায়ু গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম বা দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
শীতকালীন মৌসুমী বায়ু অপেক্ষা গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর গতিবেগ বেশি। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমীর বায়ুর গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১৬ কিলোমিটার এবং শীতকালীন মৌসুমী বায়ুর গতিবেগ ৩ থেকে ৬ কিলোমিটার। জানুয়ারিতে বায়ুর গড় চাপ ১০২০ মিলিবার এবং মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০০৫ মিলিবার।
মন্তব্য
আজকের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ আলোচনা বিষয়ক শিরোনামে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সে বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছো বলে মনে করে করি। বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে একাধিকবার পড়ার জন্য পরামর্শ রইলো। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহিত পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url